Tuesday, December 21, 2010

মিশরীয় রাশিচক্র

আমরা জানি, রাশিচক্র প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা পায় প্রাচীন গ্রিসে। কিন্তু প্রমাণ মিলেছে তারও প্রায় ১শ বছর আগে মিশরীরা রাশিচক্র বিষয়ে সচেতন ছিল। বিশেষ করে মিশরের রাজারা (ফারাও) রাশিচক্রের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানতে খুবই উৎসাহী ছিল। তারাও মনে করতো নক্ষত্রের অবস্থান ও ক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে একজন মানুষের জীবন। তবে মিশরীয়দের রাশিচক্র গ্রিকদের চেয়ে ব্যতিক্রম। রাশিগুলোর নাম ও রূপের ছিল ভিন্নতা। কিন্তু রাশিরসমূহের নক্ষত্র-মানচিত্র ছিল প্রায় অভিন্ন। মিশরীয় রাশিচক্রেও ১২টি রাশি রয়েছে। তবে মিশরীয়দের কাছে এক একটি রাশি এক একজন দেব-দেবী বলে স্বীকৃত ছিল। সেই ১২টি রাশির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।

থাত (২৯ আগস্ট-২৭ সেপ্টেম্বর)
থাত জ্ঞান অর্জনের দেবতা। যারা থাত রাশির জাতক তারা জটিল সমস্যা সমাধানে এবং ঘটনাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। ভালো কিছু পেতে তারা সবকিছু করতে প্রস্তুত। অসাবধানতা, অধৈর্য ও কঠোরতা এ জাতকদের দুর্বল দিক। এরা সাধারণত সাংবাদিক, অভিনেতা, আইনজীবী ও শিক্ষতা পেশাকে বেছে নেয়।


হোরাস (২৮ সেপ্টেম্বর-২৭ অক্টোবর)
উজ্জ্বল সূর্যের দেবতা হোরাস। এই রাশির জাতকরা সাহসের সাথে বিপদের মোকাবেলা এবং আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম। এরা আশাবাদী এবং সুন্দর জীবন যাপনের কৌশল তাদের আয়ত্তে। কল্পনাপ্রবণতা ও অতিসাহস তাদের দুর্বল দিক। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদ হিসাবে এরা বেশি উপযুক্ত।


ওয়াজ্জেত (২৮ অক্টোবর-২৬ নভেম্বর)
রাজগোখরা ওয়াজ্জেত দেবীর প্রতীক। তিনি জ্ঞানের দেবী। এই রাশির জাতকরা যুক্তিবাদী, সতর্ক, বিবেকবান, পরোপকারী, উচ্চাকাঙ্খী ও নিজস্বমতালম্বী হয়ে থাকে। পারিবারিক মূল্যবোধকে এরা খুবই গুরুত্ব দেয়। নিরাশাবাদ, অহংকার, অসামাজিক মনোভাব এবং কৃপণতা এই জাতকদের দুর্বল দিক। এরা সাধারণত ঠিকাদার, পরিচালক, স্থপতি, প্রকৌশলী ও সম্পাদক হন।


সিখমিত (২৭ নভেম্বর-২৬ ডিসেম্বর)
যুদ্ধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেবতা সিখমিত। এই রাশির জাতকরা প্রখর বুদ্ধির অধিকারী, আশাবাদী ও কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকে। সর্বক্ষেত্রে এরা বিবেচক ও তার্কিক এবং যে কোনো অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, বিশেষ করে কঠিন সময়েও নিজেকে এরা মানিয়ে নিতে পারে। অধৈর্য ও ঝগড়াটে স্বভাব এই জাতকদের দুর্বল দিক। পেশা হিসাবে এরা সাধারণত শিক্ষকতা, লেখালেখি ও ধারাভাষ্যকে বেছে নেয়। বিশ্বের নামকরা খেলোয়াড়রা এই রাশির জাতক।


স্ফিন্ক্স (২৭ ডিসেম্বর-২৫ জানুয়ারি)
এক অদ্ভূত প্রাণী, যারা মাথাটা মানুষের কিন্তু শরীর সিংহ’র। ধন-সম্পদের প্রহরী হিসাবে এই স্ফিন্ক্সকে কল্পনা করা হতো, যে যেকোনো সময় যেকোনো প্রাণীর রূপ ধারণ করতে সক্ষম। এই রাশির জাতকরা নিজেদের আচার-আচরণের পরিবর্তন করে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বিশ্লেষণী, অনুসন্ধানী ও নিয়মানুবর্তী মানসিকতা এই জাতকদের বিশেষ গুণ। এরা অনেক সময় অনেকের ওপর অবিচার করে থাকে। অহংকারও তাদের অন্যতম দুর্বল দিক। পেশাগত দিক থেকে এরা নিজেই নিজের মালিক হতে পছন্দ করে।

শু (২৬ জানুয়ারি-২৪ ফেব্রুয়ারি)
আলো ও বাতাসের দেবতা শু। এই রাশির জাতকরা অসাধারণ সৃজনশীল মেধার অধিকারী হয়। তারা একবার তাদের প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পেলে সফলতা নিশ্চিত। এরা ব্যর্থতাকে ভয় পায় না। বিবেকবোধ ও নীতিচর্চা এদের অন্যতম বড় গুণ। এরা প্রায়ই দ্বিধায় পড়ে এবং অনেক সময় বড় বড় সুযোগ হাতছাড়া করে। এরা সমাজকর্মী, পরামর্শক, কৃষক, জীববৈচিত্র্য রক্ষাকারী হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলে।


ইসিস (২৫ ফেব্রুয়ারি-২৬ মার্চ)
ইসিস অনুশাসনের দেবতা। এই রাশির জাতকরা সম্মানিত, আদর্শবাদী ও স্পষ্টবাদী। এরা যুক্তিবাদী বলে একটি বিষয়কে বিভিন্ন দিক থেকে দেখে বিশ্লেষণ করে। সবার সাথে এদের মসৃণ সম্পর্ক। এরা উদ্যোমী ও আত্মনির্ভরশীল। খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরা বড় ধরণের সমস্যাকে মাঝপথেই রেখে বিদায় নেয়। এটি তাদের চরিত্রের খারাপ দিক। ফটোগ্রাফি, বাণিজ্যিক কলা ও বিজ্ঞাপন ব্যবসায় এদের প্রিয় পেশা।


ওসিরিস (২৭ মার্চ-২৫ এপ্রিল)
নরকের দেবতা ওসিরিস। এই রাশির জাতকরা আবেগের দিক থেকে অস্পষ্ট এবং অনেক সময় ভুল বুঝার সম্ভাবনা থাকে। এরা কর্মক্ষম, বুদ্ধিমান, উদ্যোগী এবং সুযোগকে কাজে লাগাতে পটু। দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া এদের চরিত্রের সবচেয়ে খারাপ দিক। বিক্রয়কর্ম ও শিক্ষকতাকে এরা পেশা হিসাবে বেছে নেয়।

আমুন (২৬ এপ্রিল-২৫ মে)

প্রাচীন মিশরীয় পুরাণ অনুযায়ী আমুন হলো পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। এই রাশির জাতকরা বলবান, দৃঢ় এবং সমস্যা সমাধানে পারদর্শী হয়। অটুট ইচ্ছাশক্তি, বিপুল সাহস এবং আত্মবিশ্বাস এই জাতকদের পুঁজি। নেতা হিসাবে এরা সফলতার পরিচয় দিতে পারে। একগুঁয়েমি ও অসহিষ্ণুতা এদের চরিত্রের খারপ দিক। পেশা হিসাবে এরা আর্থিক কর্মকা- বেছে নেয়।

হাতোর (২৬ মে-২৪ জুন)

হাতোর আকাশ ও জমিনের দেবী। এই দেবী খুবই আবেগপ্রবণ এবং ভালোবাসার সাথে প্রবল ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই রাশির জাতকরা জীবনকে উপভোগ করতে এবং সেরাটাকে অর্জনে যথেষ্ট কৌশলী ও সফল। এরা খুবই রোমান্টিক ও উল্লসী হয়ে থাকে। এরা বদমেজাজি এবং সহজেই ভালোবাসা, ঘৃণা কিংবা ঈর্ষায় নিমজ্জিত হয়। যোগাযোগ ও প্রদর্শন কলা, চিত্রকলা, সমাজকর্ম ইত্যাদি পেশার দিকে তারা বেশি ঝুঁকে।

ফিনিক্স (২৫ জুন-২৪ জুলাই)

 ফিনিক্স জীবন ও পুনর্জীবনের পাখি। এই রাশির জাতকরা সম্ভাবনা তৈরি করতে পারদর্শী। নমনীয়তা, আশাবাদ এবং অন্যের মধ্যে আশা ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা এই জাতকদের বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এরা জীবন যাপনে অসামাজিক ও একগুঁয়ে এবং বাস্তবতাবর্জিত। এরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে, কারো কর্মচারী হয়ে কাজ করতে নারাজ এবং এদের অনেকেই বড় মাপের প্রকৌশলী হয়ে ওঠে।


আনুবিস (২৫ জুলাই-২৮ আগস্ট)
নরকের প্রহরী আনুবিস। প্রাচীন মিশরীয় রাশিচক্রের সবগুলো চরিত্রের মধ্যে এই চরিত্রটিই সবচেয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী এবং অবস্থা ও ঘটনাকে নিজের অধীনে রাখতে পারে বলে সম্মানিত হয়। সমবেদনা, দানশীলতা ও স্নেহশীলতা তাদের বিশেষ গুণ। নিজের যুক্তিকে প্রমাণ করতে তারা সক্ষম। বিজ্ঞান ও ফ্যাশন ব্যবসার প্রতি তারা উৎসাহী।
লিখেছেন : সুদীপ্ত সালাম