Monday, January 4, 2010

মেষ(Aries)


এই তারকাম-লীকে ভেড়া হিসাবে কল্পনা করা হয়েছে। গ্রিকপুরাণ অনুসারে, রাজপুত্র ফ্রিসোস ও তার বোনকে যখন তাদের সৎমা ইনো হত্যা করার পরিকল্পনা করে তখন মেঘের দেবী নেফেলের নির্দেশে একটি সোনালী বর্ণের ভেড়া তাদের উদ্ধার করে কোলকাইস দেশে পৌছে দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রাজপুত্র ঈশ্বরকে খুশি করতে তার প্রিয় ভেড়াটিকে বলি দিয়ে তার চামরা মন্দিরে টাঙিয়ে দেয়। রাশি চক্রের প্রথম রাশি। আগে মনে করা হতো সূর্য মেষ রাশির বলয়ে থেকে বিষুববৃত্ত অতিক্রম করেছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে সূর্য মীন রাশির বলয়ে ছিল। কিন্তু এখনও মেষ রাশিকে প্রথম রাশি বলা হয়।

বৃষ(Taurus)


এই তারকাম-লীর বিন্দুগুলোকে যোগ করলে অনেকটা ষাঁড়ের মতো দেখায়। তাই বৃষম-লীকে ষাঁড় হিসাবে ভাবা হয়। এই ষাঁড়টি আর কেউ নন, স্বয়ং দেবতাদের দেবতা জিউস। তিনি রাজকুমারী ইউরোপাকে হরণ করতে একবার একটি সাদা ষাঁড়ের রূপ ধারন করেছিলেন।
বৃষ রাশির অবস্থান কালপুরুষের উত্তর-পশ্চিমে। রাশির প্রধান তারা রোহিণী। ২০ অক্টোবর-৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই তারাকান্ডলী থেকে উল্কাপাত হয়।

মিথুন(Gemini)


মিথুন অর্থ যমক। জিউসের দুই যমজ ছেলে, ক্যাস্টোর ও পোলাক্স। গ্রিকপুরাণ বলে, এই দুই ভাই গৃহস্থের পশু চুরি করতে পারদর্শী। আরেক পুরাণকথার সাথে এই কথার মিল আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ছায়াপথ হলো দুগ্ধ গরুরপাল। জ্যোতির্মন্ডলের দিকে তাকালে অনেক সময় দেখা যায় মিথুন রাশির তারকাম-লীর এক অংশ ছায়াপথের মধ্যে আর বাকি অংশ ছায়াপথের বাইরে অবস্থান করছে। এ থেকে গল্প হলো, এক ভাই গরু চুরি করছে, আরেক জন পাহারা দিচ্ছে।
শীতকালীন এই নক্ষত্রপুঞ্জে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাত্রার বেশ কিছু তারা আছে। সূর্য চলার পথে এক সময় এই রাশিচক্রে অবস্থান নেয়।

কর্কট(Cancer)


এই রাশির প্রতীক কাঁকড়া। জিউসপুত্র হারকিউলিস যখন একাধিক মাথাওয়ালা দানব হাইড্রার সাথে যুদ্ধ করছিল তখন হারকিউলিসের শত্রু দেবী হেরা একটি কাঁকড়া পাঠায় হারকিউলিসকে বাধা দিতে। কাঁকড়া এসে কামড় বসায় হারকিউলিসের হাঁটুতে। যুদ্ধে বাধা পড়ায় হারকিউলিস ভীষণ বিরক্ত হয়ে কাঁকড়াটিকে পিষে মারে। কিন্তু দেবী হেরা তার প্রিয় কাঁকড়াটিকে হতাশ করেননি, সম্মানিত করে জ্যোতির্মন্ডলে স্থান দেন। কর্কট তারকামন্ডলী দেখতে কিছুটা কাঁকড়া আকৃতির।
এই শীতকালীন রাশিরচক্রের তারকামন্ডলী সবচেয়ে অস্পষ্ট।

সিংহ(Leo)


গ্রিসের নিমিয়া নগর দখল করে রেখেছিল একটি দানব সিংহ। পুরাণশাস্ত্রে এটি নিমিয়ান সিংহ নামে পরিচিত। সিংহটি নগরে আতঙ্ক তৈরি করে রেখেছিল। বীর হারকিউলিস ভ্রমণ করতে করতে নিমিয়ায় পৌছায়। তখন তার সংঘর্ষ হয় সিংহটির সাথে। হারকিউলিস সিংহটিকে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে সেই দানব-সিংহটিও আকাশে স্থান পায়।
সিংহ রাশির তারকামন্ডলীর বুকে মঘা নামের একটি লালচে উজ্জ্বল তারার অবস্থান। বসন্তকালে ও গ্রীষ্মকালের প্রথম দিকে সিংহ আকাশে স্পষ্ট হয়।

কন্যা(Virgo)


গ্রিক ও রোমান পুরাণ মতে, দেবী দিমিটার জিউসের ঔরসে কুমারী মা হিসেবে জন্ম দেন পারসেফোনিকে। শষ্য ও উর্বরতার দেবী কুমারী মা ডিমিটারের অবয়বই দেখা যায় কন্যাম-লীতে। অন্য এক পুরাণ অনুসারে, কন্যা রাশি কুমারী দেবী ইউসতিশিয়ার প্রতীক। তুলা রাশির মতো এই দেবীর হাতেও দাঁড়িপাল্লা রয়েছে।
চিত্রা, নাভিতারা, দ্রাক্ষাহরণী এই তারকামন্ডলীর উল্লেখযোগ্য তারা।

তুলা(Libra)


গ্রিকদের সুবিচারের দেবী জিউসকন্যা অ্যাস্ট্রিয়া। তার এক হাতে একটি দাঁড়ি-পাল্লা নিরপেক্ষতার প্রতীক হিসাবে শোভা পায়। এই দেবীকেই গ্রিকরা তুলা রাশি চক্রের তারকামন্ডলী হিসেবে জ্যোতির্মন্ডলে কল্পনা করতো।
জ্যোতির্মন্ডলের সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্র স্তবক শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত এই রাশির চক্রের তারকামন্ডলী। এর আবরণী জোড়া এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু।

বৃশ্চিক(Scorpio)


সমুদ্ররাজ পসিডনের সুদর্শন পুত্র অরিয়ন, যে মেয়ে তাকে দেখে তার প্রেমে পড়ে যায়। বাদ যায় না স্বয়ং প্রেমের দেবী অরোরাও। মানুষের গর্ব দেবতারা সহ্য করবেন কেন? অরিয়ন ছিল দাম্ভিক প্রকৃতির ছেলে। জিউসপুত্র দেবতা এপোলোর বোন আর্টেমিসও অরিয়নের প্রেমে পড়ে। এপোলো তা মেনে নিতে পারে না। অরিয়নের অহংকার চূর্ণ করতে এপোলো একটি বৃশ্চিক বা বিছা পাঠায়। যতক্ষণ না অরিয়নের মৃত্যু হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে দংশন করতে বৃশ্চিককে আদেশ করা হয়। বৃশ্চিকের হাত থেকে রক্ষা পেতে অরিয়ন সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়। তবুও বাঁচা যায়নি, আর্টেমিসেরই হাতে অরিয়ন ভুল করে নিহত হয়। আজ্ঞাবহ বৃশ্চিকটি আকাশে স্থান পায়।
বৃশ্চিক রাশি চক্রের তারকাম-লীর উল্লেখযোগ্য তারা অরিয়ন, বাংলায় যা কালপুরুষ নামে পরিচিত। জুনে দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে বৃশ্চিকম-লীর তারাগুলোকে দেখা যায়, জ্যেষ্ঠ ও শুক তারা অন্যতম।

ধনু(Sagittarius)


ফিলিরা ও শনির পুত্র কাইরন। চিরনের হিংসুটে স্ত্রী রিয়া । কাইরন তার এই হিংসুটে বউয়ের কাছ থেকে নিষ্কৃতি পেতে একদিন মন্ত্রবলে এক অদ্ভূত রূপ ধারন করে। অর্ধেক অশ্ব অর্ধেক মানুষ। কমরের উপরি ভাগ হয় মানুষের মতো, তার নিচের অংশ ঘোড়ার মতো। কাইরনের ঘোরার মতো চার পা আছে, হাতে আছে তীর-ধুনক। ধনু রাশির তারকাম-লীকে দেখে এই গাল-গপ্পই বানিয়ে ছিল পুরাকালের গ্রিকরা।
বৃশ্চিক রাশির পূর্ব দিকে এর অবস্থান। ধনুম-লীতে আমাদের পৃথিবীর ছায়াপথের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অবস্থিত।

মকর(Capricorn)


গ্রিকপুরাণ মকরম-লকে অনেক সময় অ্যামলথিয়া নামের ছাগল হিসাবে চি‎িহ্নত করে, যে কিনা দেবরাজ জিউসের দুধমাতা। অ্যামলথিয়া জিউসকে দুধ পান করিয়েছিলেন। দেবরাজের দুধমাতা বলেই তিনি আকাশে স্থান পান। আরেকটি গল্প হলো, ছাগল-দেব প্যানকে দানব টাইফন আক্রমণ করতে এলে প্যান নদীতে আশ্রয় নেন। তখন তার শরীরের যে অংশ পানিতে ডুবে ছিল সে অংশ মাছের আকৃতি ধারন করে। আর এই জন্যই পুরাকালে দক্ষিণ গোলার্ধের এই তারকামন্ডলীকে অর্ধেক ছাগল অর্ধেক মাছ হিসাবে কল্পনা করা হতো।

কুম্ভ(Aquarius)


ট্রয়ের গনিমেডে এক অতি সুন্দরী যুবতী। দেবরাজ জিউস তার প্রেমে পড়েন। তিনি ঈগলের ছদ্মবেশে অপহরণ করে স্বর্গে নিয়ে যান এই যুবতীকে। গনিমেডেকে দেবতাদের পেয়ালায় মদ তুলে দেয়ার কাজে লাগানো হয়। এজন্যই কুম্ভ রাশি চক্রের তারকামন্ডলীর চিহ্ন‎ হিসাবে আমরা দেখি একজন পাত্র থেকে পানি জাতীয় কিছু ঢালছে। অন্য স্থানে বলা হয়েছে, কুম্ভ হলো জলের ধারক। যিনি পৃথিবীতে বন্যা দেন এবং নদীগুলো ভরাট করেন। শুধু তাই নয় তিনিই গ্রিকপুরাণের সেই মহা-প্লাবনের হেতু।
গ্রীষ্ম ও শরৎকালে এই রাশির নক্ষত্রগুলোকে দেখা যায়। ২১ জানুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি সূর্যের আড়ালে থাকে।

মীন(Pisces)


ভয়ঙ্কর দানব টাইফন একবার ভালবাসার দেবী আফ্রোদিতে ও তার পুত্র এরসের পেছনে লাগে। মা-পুত্রকে সে ধ্বংস করেই ছাড়বে। তখন দানবের হাত থেকে বাঁচতে দেবী ও দেবীপুত্র মাছের রূপগ্রহণ করে। তারা একে অন্যকে লেজ দিয়ে দৃঢ় ভাবে ধরে রাখে যাতে বিছিন্ন না হয়ে যায়। এই চিত্রটিই কল্পনা করে মীন রাশির প্রতীক নির্মিত।
মীন তারকাম-লীর চতুর্থ উজ্জ্বলতার ওপরে কোনও তারা নেই। কিন্তু যেহেতু মহাবিষুব বর্তমানে এই রাশি চক্রেই অবস্থান করছে সেহেতু এই রাশি গুরুত্বপূর্ণ।